Diwali Special ...কিছু কথা... কিছু লেখা...
Why Kali Puja is so popular in Bengal?
Hindu Purans indicate that Shakti Puja has been a very special celebration in the combined land of Bengal found in Puran as “Shakti Peeth” – the land where “Shakti” The Feminine Power has been eternally worshipped from the early days of Hinduism as Durga, Kali, Lakshmi and Saraswati. So in every corner of Bengal we have Kali temples and devotees like Shri Ramkrishna, Ramprasad and more…
শ্যামা মায়ের কথা
সুদীপ্তা চট্টোপাধ্যায়, নিউ জার্সি





দক্ষিন দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকের রামকৃষ্ণপুর আমাদের চ্যাটার্জি পরিবারের আদি নিবাসস্থল । বংশতালিকা থেকে জেনেছি এই রাঢ় পরিবারের বর্তমান প্রজন্মকে ধরে সাতপুরুষের বসবাস এই বারেন্দ্রভূমিতে।
আমার বাবা শ্রী শক্তিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের মুখে শুনেছি হাওড়া হুগলীর একাধিক অঞ্চল একসময় বর্ধমানের রাজার অধীন হয়। পরবর্তীকালে এই বিশাল অঞ্চল ছোট ছোট জমিদারীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এইসব স্থানীয় জমিদাররা সময়মত বর্ধমানের মহারাজাকে কর দিয়ে নিজের এলাকা স্বাধীনভাবে শাসন করতেন।
গিরিশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় হুগলী জেলার বৈঁচি গ্রামের জমিদারদের কাছ থেকে দিনাজপুরের এই মহালের ভার নিয়ে প্রথম এই ভূমিতে এসেছিলেন । তারপর এই বংশের চতুর্থ পুরুষ আমার ঠাকুর্দা স্বর্গীয় শ্রী গঙ্গেশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ব্রিটিশদের শাসনকালে পাবনার বিজলিলতা দেবীর কাছ থেকে আরও ষোলটা গ্রামের জমিদারী কিনে তার সাম্রাজ্য আরো বিস্তৃত করেন।
বাড়ীর কুলদেবতা নারায়ন এবং সর্বমঙ্গলার নিত্য পূজা আর বারো মাসে তেরো পার্বণের সঙ্গে অন্যান্য বনেদী বাড়ীর মত এ বাড়ীর ঠাকুর দালানে একসময় মহাসমারোহে পালিত হত একচালার দুর্গা পূজা , বসন্তকালে আয়োজিত হত বাসন্তী-পূজা ,জগদ্ধাত্রী পূজাও হত।
এই সব পূজাপার্বণের খরচা সামলানোর জন্য দেবোত্তর সম্পত্তি ছিল ।
কিছু নিম্নবিত্ত সাঁওতাল,ওঁড়াও,মুন্ডা পরিবারকে পুরুষানুক্রমে সেই জমির দেখাশোনা করার ভার আর পূজোর বিভিন্ন কাজে যোগদানের অধিকার দেওয়া হয়েছিল।আর এক ব্রাহ্মণ পরিবারকে দেওযা হয়েছিল নিত্য পূজার ভার।আজও তাদের বংশধরেরাই সেই সব কাজ করে।
জমিদারী প্রথা উঠে গেলে জমিদার শ্রী গঙ্গেশ চন্দ্রের পরবর্তী বংশধররা নানান পেশায় যুক্ত হয়ে শহরে চলে যায়।সেই সময় থেকে দুর্গোৎসব বারোয়ারী বা সার্বজনীন করে দেওয়া হয়।
আমার ছোটবেলা জুড়ে সেই যুগের নানা স্মৃতি।
দিগন্ত বিস্তৃত নয়ন জুড়ানো সোনালী ফসলের মাঠ আর সবুজ গাছপালায় ঘেরা প্রকৃতির মাঝে,হাতি গলতে পারে এমন উঁচু দেউড়ি তার দুপাশে নহবতখানা, প্রশস্ত ঠাকুর দালানের পাশে নাট্যশালার ভগ্নাংশের সাক্ষী আমার বালিকাবেলা।
স্কুলে ছুটি পরলেই মন উচাটন হত কবে যাব সেই রূপকথার রাজ্যে।
বারমহলে ছিল কাছারি,বৈঠকখানা আর দাদুর কোর্টঘর।
দাদু একদিকে ছিলেন ব্রিটিশ শাসক প্রদত্ত ক্ষমতায় ডেব্ট সেটেলমেন্ট বোর্ডের অনারারী জাজ,সমস্ত দরকারি কাজে ইন্টারপ্রেটার হিসেবে ডাকা হত সাউথ সাবার্বাণ আর প্রেসিডেন্সির স্কুলের ছাত্র আমার দাদুকে।
আবার অন্যদিকে অন্দরমহলের আঁতুরঘর আর তোষাখানার মাঝের ছোট্ট ঘরে স্বদেশীদের সংক্ষিপ্ত সময়ের গোপন আশ্রয়দাতা।
শুনেছি পেছনের খড়খড়ি দেওয়া প্রশস্ত দরদালান অনেক স্বদেশী কর্মকান্ডের পরিকল্পনার সাক্ষী। নিজের জমিদারীতে দুটো স্কুল,একটা প্রাইমারি,একটা হাইস্কুল ,বেসিক স্কুল,লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠাতা। সদর ছাড়া প্রথম পোষ্ট অফিস একমাত্র তার গ্রামেই ছিল আর তার প্রতিষ্ঠাতাও তিনিই। স্বাধীনতার পর প্রথম প্রেসিডেন্টের হাতে সোসাল সার্ভিসের জন্য মেডেলও পেয়েছিলেন।
বারমহল থেকে গোলাবাড়ী পেরিয়ে অন্দরমহলের চৌহুদ্দীতে ঢোকার মুখে ছিল একটা বকুলগাছ। পাশে আনন্দসাগর নামে দীঘির মত বিরাট পুকুর আর তার বাঁধানো ঘাট। সেই ঘাটের পাশে কুঁচফলের গাছ। ফ্রিল দেওয়া ফ্রকের কোঁচোড়ে কুঁচফল নিয়ে অন্দরের আবছায়া গলিপথ দিয়ে ঢুকতাম অন্দরে। এক চৌকো উঠোনের একপাশে একান্নবর্তী পরিবারের পাকা রান্নাবাড়ি, অন্যপাশে বিরাট দোতলায়
মেজদাদু আর ছোটদাদুর সংসার, দুই বাড়ীর মাঝের দোতালায় আমার দাদুর বাড়ী,পেছনে গোয়ালবাড়ি, আস্তাবলবাড়ি পেরিয়ে বিরাট আমবাগান।
এমনি কত বাড়ি ,পুকুর আর তার মধ্যে আবার কত ঘর ভাগ—
আঁতুর ঘর, স্কুলঘর যেন একটা তল্লাট জুড়ে হইহই একখানা ব্যাপার।
খিড়কীর দরজার পাশে সুবৃহৎ আনন্দসাগরের বাড়ীর মেয়েদের পাথরবাঁধানো ঘাট।
আজ অন্দরমহলে শুধু আমাদের চূন-সড়কি ও পুরনো ইটের বোঝা নিয়ে ভাঙাচোরা দালানবাড়ীটুকুই আর মজা আনন্দসাগর পুরোনো ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে টিকে আছে।
তবে বাড়ীর চৌহুদ্দির একটু দূরে এই বংশের প্রতিষ্ঠিত কালিমন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মা শ্যামাসুন্দরীর পূজো আজও মহাসমারোহে পালিত হয় এবং এই পূজোর দায়িত্বভার এবং এই মন্দিরের নিত্য পূজোর ভার চ্যাটার্জী পরিবারই বহন করে।
যদিও মা’কে আশেপাশের শহর, গ্রামের মানুষেরা এতটাই জাগ্রত মনে করে যে এই পূজো এখন প্রায় মেলার আকার ধারন করেছে। প্রচুর লোকের সমাগম হয় এই পূজোয়।
শ্যামামায়ের পূজোর বিশেষত্ব হল নিত্য পূজো ছাড়াও দীপাবলির দিন সূর্যাস্তের আগে ওঁর পূজো হয়।
তারপর রাতে বাড়ীর ঠাকুরদালানে দীপান্বিতার পূজো হয়।
আদি মূর্তি ছিল নিমকাঠের প্রায় ৫০০ বছর ধরে পূজিত এই এই শ্যামা মায়ের নানা ধরনের অলৌকিক গল্প আমরা ছোট থেকে শুনে এসেছি ,এই ঘটনার পর কষ্টি পাথরের শ্যামা সুন্দরীকে প্রতিষ্ঠা করা হয়।এই পূজোর ভার চ্যাটার্জী বাড়ীর শরিকদের দুই তরফে মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও পূজোয় যোগদিতে দূর দূরান্তের লোকেরা আসে।
স্বপ্নাদেশ পেয়ে নাকি এই বংশের পূর্বপুরুষ শ্যামা মা’কে উদ্ধার করেছিলেন এখনকার মন্দিরের পাশের পুকুর থেকে। তবে শ্রী গঙ্গেশ চ্যাটার্জীর ছেলে শ্রী শক্তি প্রসাদ চ্যাটার্জীর যিনি এই প্রজন্মের জীবিত বড়কর্তা তার কাছে শুনেছি ৫০০ বছরের থেকেও অনেকবেশী পুরোনো এই শ্যামা মা’।
কোন এক সময় শ্যামাসুন্দরী দেব্যা নামে এক বিধবা মহিলা তার একমাত্র পুত্রকে নিয়ে বাস করতেন এই এলাকায়। পুত্র ছিলেন মাকালীর ভক্ত ।প্রতিদিন নিজের হাতে কালীমূর্তি তৈরী করে পূজো করে বিসর্জণ করতেন। তারপর তিনি তন্ত্র সাধনা শুরু করেন। শোনা যায় সাধনায় সিদ্ধিলাভের পর নিজে হাতে নিমকাঠ দিয়ে কালিমূর্তি বানিয়ে মূতিটি চন্ডালের শবাসনের ওপর প্রতিষ্ঠা করেন।পঞ্চমুন্ডের আসনে বসে তিনি পূজো করতেন। সারাদিনরাত তিনি শ্মশানে ঘুরে বেড়াতেন শেষ জীবনে প্রায় উন্মাদ হয়ে যাওয়ার পর তিনি কোন এক সময় পুকুরে ফেলে দেন সেই মূর্তি।পরে শ্রীমতী শ্যামাসুন্দরী দেব্যা গিরিশচন্দ্র চ্যাটার্জীর শরণাপন্য হলে মা’কে তিনি উদ্ধার করেন এবং তাঁর হাতেই এই মা’যের ভার তুলে দেন সেই মহিলা।
তখন সেখানে তার নামেই মা’য়ের নামকরন করে মায়ের পূজার যাবতীয় ভার তুলে নেয় চ্যাটার্জী পরিবার। তৈরী হয় মন্দির। মা’আসলে শ্মশানকালি। মন্দিরের পাশেই চ্যাটার্জী বংশের পারিবারিক শ্মশান।
ছোটবেলা থেকে অনেক গল্প শুনেছি এই মা’য়ের। তার পূজা না করে এই পরিবারের কোন শুভকাজ শুরু হয় না।গাছের প্রথম ফল,জমির প্রথম শস্য,পুকুরের বছরের প্রথম মাছ তোলা থাকে এই বাড়ীর সবথেকে বড় মেয়ে শ্যামার নামে। গল্প আছে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন মাঠ ছেয়ে আছে সর্সে ফুলে ,তাঁর শখ হয়েছে বড়া খাবেন। নিত্য ভোগে বড়া না পেয়ে তিনি নাকি ক্ষেতে ঢুকে নিজেই কোঁচোড়ে ফুল নিয়ে এসেছিলেন। জমিতে তাঁর পায়ের নূপুর পড়ে ছিল আর মন্দিরের চাতালে সর্সে ফুল।
এমন অনেক গল্প প্রচলিত আছে তাঁর নামে। শুনেছি ডাকাতেরা স্বালাঙ্করা মায়ের গয়না চুরি করতে এসে একটা হাত কেটে ফেলে যদিও তারা নাকি বেশিদূর যেতে পারেনি। পথেই তাদের মৃতদেহ পাওয়া গেছিলো। মৃত্যুর কারন অজানা। পরের ঘটনার সত্যি মিথ্যে যাচাই করার সুযোগ নেই কিন্তু সেই কারনেই নাকি বেনারস থেকে কষ্ঠীপাথরের মূর্তি আনা হয়। এখনও সেই কষ্ঠিপাথরের মূর্তিরই পূজা হয়।
তিনি ভক্তদের কোন প্রাথর্না অপূর্ণ রাখেন না। এই বিশ্বাসে আজ শত শত মানুষ আসে তার মুক্ত প্রাঙ্গনে,
পূজো দেয় মানত করে, ফল পেয়ে আবার আসে।
এখনও তান্ত্রিক মতেই মদ,মাংস দিয়ে পূজা করে এই শাক্ত পরিবার। কালীপূজোর সময় শ্যামামায়ের পূজোর ভার একবছর বহন করে তিনভাই শ্রীগঙ্গেশ চন্দ্র চ্যাটার্জী,নরেশ চন্দ্র চ্যাটার্জী এবং ভবেশ চন্দ্র চ্যাটার্জীর পরিবাবের সদস্যরা আর একবছর তাদের দুই খুড়তোতো ভাইয়ের পরিবারের সদস্যরা। এই উপলক্ষ্যে বাড়ীর সদস্যরা দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আজও একত্রিত হয়।বাড়ীতে ভিয়েন বসে।
বাড়ীর পুকুরের মাছ,জমির অরগ্যানিক সব্জি ।গোটা গ্রামের মানুষের বাড়ী সেদিন অরন্ধন দুই বেলা তাদের নিমন্ত্রন থাকে চ্যাটার্জী বাড়ীতে। কত ব্যস্ততা ঠাকুমা ,মা ,জ্যেঠিমা,কাকীমা আরো সবতিন তরফের সবাই মিলে এই দিনের অপেক্ষায় আমরা থাকতাম সারা বছর। কদিন ফিরে যাওয়া সেই একান্নবর্তী যুগে,তারপর ভাইফোঁটা কাটিয়ে আবার ফেরা শহরবাসে।
পঞ্চমুন্ডের আসনে বসে পূজা করার মত তান্ত্রিক পুরোহিত পাওয়া খুব দুঃসাধ্য কারন এই আসনে বসে মন্ত্রে বা পূজোয় ভুল হলে মা’ রাগ করেন এবং শাস্তি দেন এই কথাও প্রচলিত আছে। তবে অলৌকিক গল্প, কথা আছে নিজের মত আমাদের কাছে শ্যামা বাড়ীর মেয়ে। আজও আমরা দেশে বিদেশর যেখানেই থাকি না কেন চেষ্টা করি পূজোয় যোগ দিতে,সবসময় যাওয়া হয় না তবে যেতে না পারলেও মনটা পরে থাকে ওঁরই কাছে ।

কালীকথা ২০২১

সুষ্মিতা রায়চৌধুরী
লেখিকা/ব্লগার, নিউজার্সি

Title – The fiercely feminine
Sketch by:
Debaditya Roychowdhury
~~চোখদুটি রক্তপিঙ্গল বর্ণের। চুলগুলি আলুলায়িত, দেহটি শুকনো ও ভয়ংকর, বাঁহাতে মদ ও মাংসে ভরা পানপাত্র, ডান হাতে সদ্য কাটা মানুষের মাথা। দেবী হাস্যমুখে আমমাংস খাচ্ছেন। তাঁর গায়ে নানারকম অলংকার থাকলেও, তিনি উলঙ্গ এবং মদ্যপান করে উন্মত্ত হয়ে উঠেছেন।~~
ছি ছি,এ কেমন নারী!!
কয়েকদিন আগেই লক্ষীমন্ত হয়ে মুখে রা না কাটা মেয়েটার আজ হল কি!
নিশ্চুপ পদচারণায় ভাড়ার পূর্ণ করা শ্রীময়ীর আজ একি রুদ্র রূপ!
“জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী।
দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোঽস্তুতে”.. কালী-তা সে যতই কালো হোক, দ্বীপান্বিতার আলোয় তাঁর আবির্ভাব হয়ধরাধামে।
তাই পৃথিবী সাজে আলোর ঝংকারে,নারী সাজে রণচন্ডী রুপে ।
স্বামীর বুকের ওপর পা রেখে উলঙ্গ তান্ডবে জীভ কাটলেও,লজ্জাবস্ত্রকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে যে নারী থুরি দেবী তার “কালী” হওয়াই সাজে। আহা কালো মেয়ে না হলে কি এলোকেশী রূপের ছটায় ভুবন আলো করা যায়,চিতা ভস্ম মেখে কি তোলপাড় করা যায় ভুবন…. ”কালো,তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ”। রবিঠাকুরের বর্ণনায় যা কালোতাই সুন্দর। সব মেয়েকে শরীরের রঙে দাড়িপাল্লায় সমালোচিত হতে হয়না। দিনরাতের সন্ধিক্ষণে ঈশান কোণে কালো মেঘ যতটাসুন্দর হয় সবুজ ঘাসের ওপর ততটাই দিপ্তীয়মান সুন্দর দীঘল চোখের আদিবাসী মেয়ে। শক্ত হাতে কাঠ কুঁড়িয়ে আনে দোহারাকাঁধ, বনফুল খোঁপায় বেঁধে সে স্বপ্ন দেখে কাঠের উনুনে। মাদল মহুয়ায় লেখা হয় কৃষ্ণকলির গল্প।
কালীমূর্তি বর্ণনায় মনে ভেসে ওঠে শ্বশুর কালীকিঙ্করের অপ্রকৃতিস্থ দয়াময়ীর “প্রতিস্থাপন”অর্থাৎ নববধূর মধ্যে দেবীসত্তারনির্মাণ।সত্যজিৎ-এর “দেবী” ব্যাখ্যায় প্রথাহীন ডাক।
চেতনায় দামিনী, পটের শ্যামা, বিপ্লবী বাংলার মুখ যেন জাহ্নবীর তীরে।আমাদের স্মৃতিতে,ঐতিহ্যে,পুরাণে,যা কিছু ঘনযামিনী,তাকে আধুনিকতার আলোতে পুনর্বিবেচনা করায় শ্যামা মা। জন্ম নেয় নারীতে কালী।
একে তবে কী বলব,দেখার রকমফের নাকি দেখার আশ্চর্য সমাপতন যেখানে বঙ্গীয় যুক্তিবাদ ও আলোকপ্রাপ্তি বিষয়ে আমাদেরনানা দ্বিধা, অস্বস্তি ও সংশয় এক নিমেষে নেয় এক নতুন মোড়।পুজিত হয় “কালো”। পুজিত হয় রুদ্রাণী মত্ত অনাবৃতা এক নারী।
তাহলে কি শেষ হতে পারে না “লক্ষীশ্রী”র খোঁজ,দ্বীপান্বিতায় তো স্বয়ং মা লক্ষীর সামনে জ্বলে ওঠে আতশবাজি?
বন্ধ হবে কি ফর্সা মুখশ্রীর ভন্ড বিজ্ঞাপন?
শেষ হতে পারে কি সুন্দরী হওয়ার “নিপুণ” সংজ্ঞা?
“ভালো” হওয়ার তকমায় কি জায়গা করে নিতে পারে “অন্যরকম আনকনভেনশনাল”?
সংসার সুখের হয় দম্পতির গুণে, জন্ম নিতে পারে কি এই নতুন গল্প?
ধ্বংস-খন্ডিত হতে পারে কি কন্যা-ভ্রুণ হত্যা,শরীর ভোগের স্বাধীনতা,এ্যাসিড-কিলিং, পণ-প্রথা,সামাজিক বলপুর্বক মাতৃত্ব?
জন্ম নিতে পারে কি দ্রব্যের ঊর্ধে নারীকে সুশীল সাজিয়ে না রেখে সাধারণ মানুষ ভাবা?
প্রশ্ন ফানুসের মতন উড়ছে আকাশে।
কিন্ত প্রদীপের নীচে অবস্থান করে কুসংস্কারজনিত অন্ধকার আজও,
“নারীবলি” হয় দেবীর….!!
কিন্ত না,গর্জে তো উঠতেই হবে বারবার,প্রতিবার। আমাকে,আপনাকে।
আমার কালী, এক প্রলয়রূপী বোধ-বুদ্ধি-বিশ্বাস।
খড়্গ হাতে মৃত্তিকা প্রাণ পায় নারী দেহে, অশুভের নাশ করে।
আমার ভদ্রকালী সিঙ্গল মাদার বা স্বেচ্ছায় মাতৃত্বহীনা।
আমার ধণকালিকা কালো স্টিলেটোয় ওফিসের কাজে লেট হয়ে রাতে বাড়ি ফেরে।
আমার সিদ্ধিকালী বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে পাড়ায় দাড়িয়ে গল্প করে। হঠাৎ ফস্ করে সিগারেট জ্বালিয়েও, নিভিয়ে দেয় তাচ্ছিল্যে।
আমার যমকালী অমাবশ্যার তৃতীয় চাঁদ।
আমার রক্তকালী অবলা নয়, নির্ভয়া।
আমার কালাগ্নিরুদ্রকালী ইচ্ছেপুরণের চাবিকাঠি।
কালীকথা ২০২১-এর চোদ্দ প্রদীপে দূর হোক অসৎ উদ্দেশ্য আর অবক্ষয়ী,সংস্কারপন্থী রক্ষণশীল ভূত! আনন্দময়ী দেবী শ্যামাকে বরণ করি পুষ্পসজ্জায়।
শুধু শব্দটা খানিক নিয়ন্ত্রণে রাখলেই মিটে যায় সাদাকালোর দ্বন্ধ। “Be fair to yourself & others” তাহলেই পুরোটা “লাভলি”।
“আগে যায় বীর্য-পরিচয় পতাকা-নিচয়, দণ্ডে ঝরে রক্তধারা।
সঙ্গে সঙ্গে পদাতিক দল, বন্দুক প্রবল, বীরমদে মাতোয়ারা॥
ঐ পড়ে বীর ধ্বজাধারী, অন্য বীর তারি ধ্বজা লয়ে আগে চলে।
তলে তার ঢের হয়ে যায় মৃত বীরকায়, তবু পিছে নাহি টলে॥
পূজা তাঁর সংগ্রাম অপার, সদা পরাজয় তাহা না ডরাক তোমা।
চূর্ণ হোক স্বার্থ সাধ মান, হৃদয় শ্মশান, নাচুক তাহাতে শ্যামা॥”
(সমাপ্ত)